,

সমাজে প্রচলিত নানা ধরনের মিথ্যা

সময় ডেস্ক : মিথ্যা বলা সব ধর্মে নিষিদ্ধ। একটি মিথ্যা কথা অনেক মিথ্যা কথার জনক। জাহেলি যুগেও মিথ্যা বলা জঘন্যতম অপরাধ মনে করা হতো। মিথ্যা কথা বলা ঘৃণ্য অপরাধ, এ কথা বোঝানোর জন্য অনেক বিজ্ঞ হতে হয় না।
এটা সবার জানা আছে। আমাদের অনেকেই মিথ্যা এড়িয়ে চলেন। এবং তিনি মনে মনে সন্তুষ্ট যে তিনি মিথ্যার মতো একটি পাপ থেকে বাঁচতে পেরেছেন। কিন্তু না, আমরাও প্রতিনিয়ত এমন কিছু মিথ্যায় জড়িয়ে যাচ্ছি। চলুন দেখে নেওয়া যাক এমন কিছু মিথ্যা।
মিথ্যা সত্যায়ন করা- বর্তমানে সব জায়গায় চারিত্রিক সার্টিফিকেট বা সনদপত্র দেওয়া হয়। সাধারণত সেসব সনদপত্রে লেখা হয়, আমি এই লোকটিকে পাঁচ বছর ধরে চিনি, সে ভালো, তার চলাফেরার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেই। অথচ লোকটি আদৌও তার সম্পর্কে কিছুই জানে না। এভাবে না জেনে না শুনে কারো ব্যাপারে মন্তব্য করে দেওয়া এটা মারাত্মক খিয়ানতের অন্তর্ভুক্ত। এটা এক ধরনের মিথ্যা সাক্ষী। হাদিসে মিথ্যা সাক্ষীর ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) কবিরা গুনাহের বর্ণনা করেন, অথবা তাকে কবিরা গুনাহের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। তখন তিনি, আল্লাহ সঙ্গে শরিক করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিনি বলেন, মিথ্যা কথা বলা অথবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। বর্ণনাকারী শুবাহ বলেন, আমার প্রবল ধারণা যে কথাটি হলো… ‘মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৬২)
মিথ্যা সার্টিফিকেট- হাদিসে এসেছে, যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় সে ব্যক্তি আমানতদার। কারো কাছ থেকে সার্টিফিকেট নেওয়া মানেই তার কাছ থেকে সত্যায়নপত্র গ্রহণ করা। সমাজে অনেক ধরনের সার্টিফিকেট আছে। অনেক সময় আমরা মেডিক্যাল সার্টিফিকেট গ্রহণ করি। নিজের ছুটি মঞ্জুর করার জন্য অসুস্থতা দেখিয়ে দরখাস্তের জন্য আবেদন করি। আর এই অসুস্থতা দেখানোর জন্য ডাক্তার থেকে মিথ্যা সার্টিফিকেট বানিয়ে নিই। ডাক্তারকে পয়সা দিয়ে মিথ্যা কথা লিখিয়ে নিই। যে ব্যক্তি এ ধরনের সত্যায়নপত্র নেওয়ার জন্য ডাক্তারকে বাধ্য করবে, সে একাধিক অপরাধে জড়িত। এক. সে মিথ্যা বলেছে। দুই. ডাক্তারকে মিথ্যা বলতে বাধ্য করেছে। তিন. পয়সা দিয়ে সার্টিফিকেট নিলে, ঘুষের অপরাধে জড়িয়েছে। চার. মিথ্যা বলে ছুটি নেওয়ার কারণেই সেই ছুটিটা অন্যায় হয়েছে। পাঁচ. এই ছুটিতে যে বেতন ভোগ করবে, সেটাতেও এক ধরনের সন্দেহ চলে এসেছে। দেখুন, একটিমাত্র অপরাধ; কতগুলো অপরাধকে টেনে নিয়ে আসে। বর্তমানে আমাদের সমাজে এ রকম অহরহ ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। নামাজি, দ্বিনদার ব্যক্তিরাও এ ধরনের সার্টিফিকেট নিচ্ছে এবং এতে বিন্দুমাত্র সংকোচবোধও করে না।
বেচা-কেনায় মিথ্যা- ক্রয়-বিক্রয়ে মিথ্যা বলা প্রতিনিয়ত আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেক নামাজি দ্বিনদার ভাইদের বিশ্বাস যে ব্যবসা-বাণিজ্যে একটু-আধটু মিথ্যা বলা লাগে। না হলে বর্তমানে সমাজে ব্যবসা করা একটু দুষ্কর। এমন ব্যক্তি আমাদের চারপাশে নেহাত কম নয়। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবসায়ীদের সততার ব্যাপারে তাগিদ প্রদান করেছেন। ইসমাঈল ইবনে উবাইদ ইবনু রিফাআ (রা.) হতে পালাক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত, তিনি (রিফাআ) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ঈদের মাঠে রওনা হলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) লোকদের কেনা-বেচায় জড়িত দেখে বলেন, হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ডাকে সাড়া দিল এবং নিজেদের ঘাড় ও চোখ উঠিয়ে তাঁর দিকে তাকাল। তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের ফাসিক বা গুনাহগাররূপে উঠানো হবে; কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, নির্ভুলভাবে কাজ করে এবং সততা ধারণ করে তারা এর ব্যতিক্রম। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২১০)
বয়স্কভাতা গ্রহণ- দেশে বয়োজ্যেষ্ঠ, দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক এমন আনেক জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে, পরিবার ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে ‘বয়স্কভাতা’ চালু করা হয়। এই ভাতা নেওয়ার জন্য কিছু শর্ত আছে। অনেকেই সম্পর্কের ভিত্তিতে এর অবৈধ ফায়দা লুটে থাকে। এ ক্ষেত্রে তারা নানা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। অথচ এটাকে সে মিথ্যাই মনে করে না।
শিশুদের সঙ্গে খেলার ছলে মিথ্যা বলা- শিশুদের কাছে টানার জন্য অনেক সময় আমরা মিথ্যা কথা বলি, যা আমরা কেউ মিথ্যাই মনে করি না। আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের ঘরে বসা অবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বললেন, এই যে এসো! তোমাকে দেব। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে প্রশ্ন করলেন, তাকে কী দেওয়ার ইচ্ছা করেছ? তিনি বললেন, খেজুর। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তাহলে এ কারণে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যার পাপ লিপিবদ্ধ হতো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯১) এ জন্য বাচ্চাদের শুরু থেকেই এ শিক্ষা দেওয়ার ওয়াদা ভঙ্গ করা যাবে না। এটাও মিথ্যার শামিল।
আল্লাহ তাআলা আমাদের যাবতীয় মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন


     এই বিভাগের আরো খবর